হোম » প্রধান সংবাদ » ভাসানচরে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা

ভাসানচরে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা

উখিয়া থেকে জিল্লুর রহমান: কক্সবাজারের উখিয়া থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের স্থানান্তরের জন্য চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ২১টি বাস। বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টা দিকে নেয়াখালীর ভাষানচরের দিকে রওনা করে এসব বাস। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার প্রথম দফায় উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ১০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে বহনকারী ২১টি বাস ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তবে, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রথমে তাদের চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে আগামীকাল (৪ ডিসেম্বর) তাদের ভাসানচর নেয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, প্রথম দফায় প্রায় ৬০০ পরিবারকে স্থানান্তর করা হবে। ভাসানচরে যেতে আগ্রহীদের কক্সবাজার থেকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে বাসে করে চট্টগ্রাম নেওয়া হবে। সেখান থেকে সেনা ও নৌ বাহিনীর জাহাজে ভাসানচর যাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নিয়ে যেতে প্রস্তুত নৌবাহিনীর ১২টি ও সেনাবাহিনীর ১টি জাহাজ।

স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভাসানচরে যাচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্য দিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প হিসেবে যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে ভাসানচরের। এরই মধ্যে ভাসানচরে মজুদ রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।

ভাসানচরে প্রথম ধাপে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখা হবে ৫ থেকে ১১ নম্বর ক্লাস্টারে। তিন মাসের মজুদ সক্ষমতার খাদ্য গুদামে প্রস্তুত ৬৬ টন খাদ্যপণ্য। তবে প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করবে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার নামক একটি সংস্থা।

ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পে ১৪৪০টি ঘর এবং ১২০টি সাইক্লোন সেন্টারে থাকতে পারবেন ১ লাখ ১ হজার ৩৬০ জন রোহিঙ্গা। থাকছে খাদ্য, চিকিৎসা ও শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের এদেশে সাময়িক অবস্থান যেন আরো শোভন হয়, সে চেষ্টার কমতি করেনি সরকার। তাই তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ভাসানচরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আশ্রয়ন প্রকল্প।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের জীবন যাপন আরও নির্বিঘ্ন করতে আগেই ভাসানচরে পৌঁছেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রায় আড়াইশ সদস্য এবং ২২ এনজিওর কর্মকর্তারা। প্রথম দলের বসবাস শুরুর পর, কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা মিয়ানমারের বাকি নাগরিকরাও ভাসানচরে আসতে আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ডিসেম্বর মাসেই আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এদিকে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী দিনে কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে জাতিসংঘ অবগত আছে। কিন্তু শরণার্থীদের স্থানান্তর প্রস্তুতি কিংবা রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংস্থাটিকে যুক্ত করা হয়নি।

এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘের কাছে তথ্যও খুবই কম আছে বলে বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ব্যাপারে জাতিসংঘ তার আগেকার অবস্থানেই রয়েছে, অর্থাৎ ভাসানচরে যাবার ব্যাপরে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন জেনে-বুঝে এবং মুক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য জায়গাটি সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক, সুনির্দিষ্ট ও হালনাগাদ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যেন তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার সরকারের অব্যাহত দমন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সে থেকেই তারা বাংলাদেশ সরকারের আশ্রয়ে রয়েছে।

error: Content is protected !!