জাহিদুল হক মিন্টু, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে হাত থেকে বিয়ের মেহেদীর রং মুছতে না মুছতেই যৌতুক নির্যাতনের শিকার হয়েছে নববধূ উম্মে কুলছম (১৮) নামের এক কলেজ পড়–য়া মেয়ে। বিয়ের ২২দিনের মাথায় শ্বশুড়, শ্বাশুড়ী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মারপিটের চিহ্ন নিয়ে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে উপজেলার কনৌজ গ্রামের সামছুল ইসলামের মেয়ে কুলছুম। এদিকে হাসপাতালে ভর্তির প্রায় ২সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত কুলছুমের স্বামী কিংবা ওই পরিবারের কোন সদস্যই কুলছুমকে দেখতে আসেনি এবং কোন খোঁজ খবরও নেয়নি।
নববধূ কুলছুম জানায়, সে বর্তমানে রাণীনগর শের-এ বাংলা সরকারি মহাবিদ্যালয়ে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গত অক্টোবর মাসের ২৫তারিখে একই গ্রামের আক্তারের ছেলে রাসেলে সঙ্গে পারিবারিক ভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় লেনদেন কোন কথা ছিলো না। কিন্তু বিয়ের ১৫দিন পার হতে না হতেই ফুফা শ্বশুড় ময়েজের নেতৃত্বে স্বামী রাসেল, তার মা, বাবা ও বোন বাবার বাড়ি থেকে আমাকে যৌতুক হিসেবে ৩লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলে। এরপর থেকে তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি মারপিট করতে শুরু করে। চলতি মাসের ১৬তারিখে তার শ্বশুড়, শ্বাশুড়ী ও ননদ কুলছুমকে কোন কারণ ছাড়াই ৩লাখ টাকার কোন ব্যবস্থা না করার অপরাধে এলোপাতারি ভাবে মারপিট করতে থাকে।
মারপিটের এক পর্যায়ে কুলছুম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর খবর পেয়ে কুলছুমের বাবা সামছুল ইসলাম মেয়েকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে দেয়। এরপর থেকে শরীরে যৌতুকের মারপিটের ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন নিয়ে কুলছুম হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছে। কুলছুম আরো জানান ইতিমধ্যেই তার স্বামীকে অন্য এক জায়গায় বিয়ে দেওয়ার পায়তারাও করছে তার শ্বশুড়, শ্বাশুড়ী ও ময়েজ উদ্দিন। আমি রাসেলের সংসার করবো কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের কারণে আমাকে অন্যায় ভাবে যে মারপিট করেছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই।
আর আমার বাবা গরীব। আমার বাবা যৌতুকের এতোগুলো টাকা কোথায় পাবে। তারা যদি সময় দিতো তাহলে হয়তো বা আমার বাবা একটু চেষ্টা করতো। কুলছুমের বাবা সামছুল ইসলাম বলেন আমি অসহায় মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে খাই। বিয়ের সময় যদি তারা আমাকে যৌতুকের কথা বলতো তাহলে আমি সেই ভাবে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতাম। আর তারা আমাকে বলবে কত টাকা লাগবে। কিন্তু আমার মেয়েকে যেভাবে তারা মারপিট করেছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি বিষয়টি রাণীনগর থানায় মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।
পুলিশ বলেছে মেয়ে সুস্থ্য হওয়ার পর থানায় নিয়ে আসতে। তারা অনেক প্রভাবশালী। তাই আমি আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ভয় পাচ্ছি। এই বিষয়ে কুলছুমের স্বামী রাসেলকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে রিসিভ করে কোন কথা বলেনি। তাই এই বিষয়ে রাসেলের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন আমাকে বিষয়টি মেয়ের বাবা মৌখিক ভাবে জানিয়েছে কিন্তু লিখিত ভাবে কোন অভিযোগ দেয়নি। লিখিত ভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন
বিরামপুরে নারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
অবৈধ মাটি উত্তোলনের দায়ে অভিযুক্তকে লাখ টাকা জরিমানা
বগুড়ার শিবগঞ্জে টানা উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মরিচ চাষ নিয়ে বিপাকে কৃষক